শ্বাস কষ্ট, হাঁপানি বা এ্যাজমায় প্রাথমিক চিকিৎসা। Presented By SUPER TV BD


শ্বাস কষ্ট, হাঁপানি বা এ্যাজমায় প্রাথমিক চিকিৎসা

পাঠ - ১
এই শীতে শ্বাসকষ্ট একটি যন্ত্রণাদায়ক উপসর্গ এবং একটি শারীরিক সমস্যা। শ্বাসকষ্ট মানেই রোগ নয়, একটি রোগের লক্ষণ। একটু দৌড়ায়ে এলে বা পরিশ্রম করলে সবারই অল্পবিস্তর শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত চলতে থাকে। কিন্তু শ্বাসকষ্ট হলে ধরে নিতে হয় যেকোনো রোগের আলামত প্রকাশ পাচ্ছে। অনেকে শ্বাসকষ্ট মানেই হাঁপানি মনে করেন এবং হাঁপানি ভেবে এই রোগের সনাতন চিকিৎসা শুরু করে দেন। হাঁপানি হলে অবশ্যই শ্বাসকষ্ট হয়। তবে সব শ্বাসকষ্টই হাঁপানি নয়। ফুসফুসের হাঁপানি হলো একটি বিশেষ ধরনের শ্বাসকষ্ট।
সাধারণত হঠাৎ করে শুরু হয় এবং এই শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার পর বুকের ভেতরে বাঁশির মতো শব্দ হয় এবং সাথে কাশিও বুকের ভেতর শ্বাস বন্ধ তার অনুভব হয়। এ তো গেল ফুসফুসের হাঁপানির কথা। এ ছাড়া হৃৎপিণ্ডের বাম দিকের অংশ অকেজো হয়ে পড়লেও তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে থাকে হৃদযন্ত্রের হাঁপানি বলে। ফুসফুসের হাঁপানি ও কার্ডিয়াক (হৃদযন্ত্রের) হাঁপানি উভয় রোগেই শ্বাসকষ্ট থাকে। তবে একজন চিকিৎসক রোগীর বয়স, লক্ষণ ও বুক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অনায়াসেই বলে দিতে পারেন যে, রোগী কোন ধরনের হাঁপানিতে ভুগছেন।
বয়স্ক মানুষের হাঁপানি হলে
হাঁপানি কোনো নির্দিষ্ট বয়সের রোগ নয়। এই রোগে যে কোনো বয়সের মানুষই আক্রান্ত হতে পারে। তবে শিশু, প্রাপ্ত বয়স্ক ও বৃদ্ধদের মধ্যে হাঁপানি ভিন্নভাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। শিশুদের মধ্যে কাশি ও শ্বাসকষ্ট, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হঠাৎ শ্বাসকষ্টের আক্রমণ এবং বৃদ্ধদের মধ্যে হঠাত্ শ্বাসকষ্ট ছাড়াও সামান্য পরিশ্রমে হাঁপিয়ে পড়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়।
গ্লুকোমা, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ বয়স্কদের হাঁপানির উপসর্গকে বৃদ্ধি করে। আবার হজমের ওষুধ, ডিসপেপসিয়ার ওষুধ, অ্যান্টাসিড হাঁপানির উপসর্গকে কিছুটা কমাতে পারে। তাই বৃদ্ধ বয়সে যারা হাঁপানিতে কষ্ট পান তাদের চিকিত্সা খুব সাবধানে করতে হয়। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ একনাগাড়ে বেশিদিন ব্যবহার করা ঠিক নয়। এ ধরনের ওষুধ ব্যবহার করার ফলে কাজ হয় ম্যাজিকের মতো কিন্তু শরীরের অস্থিগুলো খুব নরম হয়ে যায়। এতটাই হাড়গোড় নরম হয়ে যায় যে, খুব সামান্য কারণেই শরীরের যে কোনো স্থানের হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে। আবার খুব জোরে কাশলে বুকের পাঁজরের হাড়ও ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা খুবই বেশি থাকে। আবার যারা স্টেরয়েড ব্যবহার করেন তাদের যক্ষ্মা রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

পাঠ ২
রোগীকে ধরে নিয়ে একটা খোলা, আরামদায়ক স্থানে বসতে দিন। কাছে ইনহলের থাকলে এক পাফ ইনহলের দিয়ে ওষুধ নিয়ে ৬ বার খোলা বাতাসে শ্বাস নিতে দিন। এরকম করে পুনরায় করে মোট ৬ বার করুন
যদি কাছে ইনহলের বা ওষুধ না থাকে তাহলে দ্রুত ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যান অথবা ইনহলের খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। 
শ্বাস কষ্টের Homeopathic চিকিৎসা বা  হাঁপানি বা এ্যাজমা (Asthma)
দীর্ঘমেয়াদী হাঁপ বা বারবার হাঁপের আক্রমণকে হাঁপানি বলে। হাঁপানি শ্বাসতন্ত্রের ক্রনিক প্রদাহ জনিত ও ক্ষুদ্র শ্বাসনালীগুলোর রোগ, যাতে ক্ষুদ্র শ্বাসনালীগুলো সর্বদা প্রদাহজনিত কারণে লাল এবং সংবেদনশীল থাকে। এ সংবেদনশীল ক্ষুদ্র শ্বাসনালীগুলো যদি ঠাণ্ডা, ভাইরাস জীবাণু অথবা হাঁপানি উদ্দীপক অন্য কোন বস্তুর সংস্পর্শে আসে তখন সেগুলোতে প্রতিক্রিয়া জনিত সংকোচন ঘটে ফলে শ্বাস নালী সংকীর্ণ হয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি হয় এবং রোগীর শ্বাস কষ্ট হয়।
কারণ (Cause)
প্রচলিত চিকিৎসা মতে –
অনেক সময় সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না।
হোমিওপ্যাথি মতে-
সোরা ও সাইকোসিস উপবিশ এর প্রধান কারণ। যেমন কারো গনোরিয়া বা চর্ম রোগ মলম দিয়ে বা বিসদৃশ পন্থায় বিতাড়িত করার পরে এ রোগটি ফুসফুসে আক্রমণ করলে রোগের নাম হয় হাঁপানি, লিভারে আক্রমণ করলে এর নাম হয় লিভার সিরোসিস, কিডনিতে আক্রমণ করলে এর নাম হয় নেফরোসিস।
গনোরিয়া বা চর্ম রোগ মলম দিয়ে বা বিসদৃশ পন্থায় বিতাড়িত করার কুফল বংশানুক্রমিক বিস্তার লাভ করে।
এলার্জি-
এলার্জির কারণে হাঁপানি হতে পারে। ধূলা, বালি, ফুলের রেণু, পশুপাখির লোম, পালক, বিভিন্ন ধরনের খাদ্য যেমন – ইলিশ মাছ, গরুর মাংস, বেগুন, ডিম ইত্যাদিতে যদি কারো এলার্জি থাকে তবে এগুলোর সংস্পর্শে এলে বা খেলে হাঁপানি হতে পারে। কম্বল, কার্পেট, লোমশ পোশাক অনেক সময় কারণ হতে পারে।
বংশগত-
যদি কারো বংশে হাঁপানির ইতিহাস থাকে তবে তার হাঁপানি হতে পারে।
শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ-
ধূমপান করলে হাঁপানি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
শ্বাস কষ্ট:
হাঁপানি রোগের প্রধান লক্ষণ হলো অল্পক্ষণ স্থায়ী শ্বাস কষ্ট। শ্বাস টেনে ভেতরে নেয়ার চেয়ে নিশ্বাস ফেলবার সময় কষ্ট বেশি হয়। বুকের ভেতর চাপ অনুভূত হয়। রোগী শুয়ে থাকতে পারে না, বসে সামনের দিকে ঝুঁকে শ্বাস নেয়। শ্বাস কষ্ট যে কোন সময় হতে পারে। তবে রাতের দিকে বিশেষ করে শেষ রাতে বেশি হয়। শ্বাস কষ্ট কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
উপসর্গ ও লক্ষণ Symptom and Sign)-
শোঁ শোঁ শব্দ:
বুকের ভেতরে শোঁ শোঁ শব্দ শোনা যায়। স্টেথোস্কোপ বুকের উপর বসিয়ে সুস্পষ্টভাবে এই শব্দ শোনা যায়। তীব্র সংক্রামণ হলে স্টেথোস্কোপ ছাড়াই শোনা যায়। নিঃশ্বাসের সময় শব্দ বেশী হয়।
ঘাড়ের দুপাশে মাংসপেশি নিঃশ্বাসের সাথে ফুলে ফুলে উঠে।
বুকের খাঁচার মাংসপেশিগুলো ভেতরের দিকে ঢুকে যায়। যাদের দীর্ঘদিন ধরে এই রোগ থাকে তাদের বুকের খাঁচার আকৃতি অনেকটা ব্যারেলের মতো হয়ে যায়। অর্থাৎ দুপাশ চাপা, গোলাকার হয়ে উঠে। কাশি থাকে এবং তার সাথে সাদা বা হলুদ কফ থাকতে পারে।
প্রকার ভেদ (Classification) :
এপিসোডিক হাঁপানি (Episodic Asthma) :
হঠাৎ শ্বাস কষ্ট সাধারণত শ্বাস ফেলার সময় যার সাথে শাঁইশাঁই শব্দ থাকে । যখন ভালো হয়ে যায় তখন রোগের কোন লক্ষণ থাকে না।
ক্রনিক হাঁপানি (Chronic Asthma) :
এটা এপিসোডিক হাঁপানি যা বছরের পর বছর কখনো না কখনো চলে। কিন্তু ভালো সময়ে কিছু পরিমাণ শ্বাস কষ্ট থাকে । কাশি মিউকাস মিশ্রিত থুথু এবং বার বার শ্বাসতন্ত্রের সংক্রামণ দেখা যায় । যখন রোগের অন্য লক্ষণ থাকে না তখনও Rhonchi দেখা যায় ।
হঠাৎ মারাত্মক হাঁপানি (Acute severe Asthma) :
এ ধরনের খুবই মারাত্মক । এই হাঁপানি থেকে রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে ।
উপসর্গ ও লক্ষণ:
১) নাড়ীর গতি হঠাৎ ১২০ বারের বেশী সেই সাথে পালসাস প্যারাডক্সাস থাকে এবং পরে কমতে থাকে ।
২) এক সাথে পুরো বাক্য বলে শেষ করতে পারে না ।
৩) সেন্ট্রাল সায়ানোসিস থাকতে পারে ।
৪) অবসন্নতা, রক্তচাপ প্রথমে বাড়ে পরে কমতে থাকে ।
৫) ফুসফুসের কোন শব্দ না হওয়া(Silent chest) ।
হঠাৎ মারাত্মক হাঁপানির চিকিৎসা: 
হঠাৎ মারাত্মক হাঁপানির চিকিৎসার প্রধান কথাই হল রোগীকে দ্রুত বিপদমুক্ত করতে হবে। হোমিও ঔষধ দিয়ে রোগীকে সাথে সাথে হাসপাতালে পাঠাতে হবে। হোমিও ঔষধে কাজ হলে হাসপাতালে যাওয়ার পূর্বেই রোগী সুস্থ অনুভব করবে। রোগী সহনশীল অবস্থায় ফিরে এলে লক্ষণ ভিত্তিক হোমিও চিকিৎসা করতে হবে।
প্রতিরোধ (Prevention) :
রোগীর অভিজ্ঞতা অনুসারে যে যে কারণে (আবহাওয়া, বিশেষ খাদ্য ও পানিয়, গোসল ও পরিবেশ ইত্যাদি) হাঁপানির টান বেড়ে যায় তা থেকে রোগীকে দূরে থাকতে হবে ।
ধূমপান এবং সব রকমের ধোয়া থেকে রোগীর দূরে থাকা প্রয়োজন ।
কম্বল, কার্পেট, লোমশ পোশাক, ঘর ঝাড়া, কুকুর, বিড়াল, খরগোস ইত্যাদির মাধ্যমে হাঁপানির সংক্রমণ ঘটতে পারে তাই এগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে ।

➤প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে ➤ঔষুধ সেবন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে রেজিষ্টার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

1 comment:

Theme images by Petrovich9. Powered by Blogger.