বাচ্চাদের ঘনঘন পেট খারাপ বা বদহজম প্রতিরোধের উপায়। Presented By SUPER TV BD

বাচ্চাদের ঘনঘন পেট খারাপ বা বদহজম প্রতিরোধের উপায়

প্রচারেঃ-সুপার টিভি বিডি।

আলোচনায়ঃ-মো:সুমন আহমেদ

বাচ্চাদের ঘনঘন পেট খারাপ বা বদহজম হওয়ার কিছু কারন.?

বড়দের তুলনায় শিশুরা বেশি সংবেদনশীল হয়। বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের তুলনায় কম হয়। যার কারণে খুব দ্রুত তারা জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়ে। শিশুদের সাধারণ ঠান্ডা, জ্বর, কাশি হলে সহজে বোঝা যায়। কিন্তু বদহজম হলে তা বোঝা কিছুটা কষ্টকর। বড়দের মত শিশুরা তাদের শারীরিক সমস্যার কথা ভাষা প্রকাশ করতে পারে না। পা টান টান করে কান্না করা, পেট শক্ত হয়ে যাওয়া, খাওয়ার পর কান্না করা, অতিরিক্ত নড়াচড়া ইত্যাদি লক্ষণ শিশুরা প্রকাশ করে থাকে।

বাচ্চাদের বদহজমে হবার প্রধান কারণঃ-

বড়দের মত শিশুদের পেটেও গ্যাস জমে থাকে। মূলত এই গ্যাস থেকে শিশুর বদহজম হয়। অনেক বাবা মা বুঝতে পারেন না কী কারণে শিশুর পেটে গ্যাস জমা হয়?
ছোট শিশুর পেটে গ্যাস হওয়ার প্রথম কারণ খাওয়ার ভুল পদ্ধতি। বদহজমের কারণে পেটে গ্যাস তৈরি হয়। যার কারণে শিশুর পেট ব্যথা হতে পারে। নবজাতক শিশুর বেলায় গ্যাস সৃষ্টি হয় বুকের দুধ খাওয়ার সময়। বাচ্চা যখন দুধ পান করেতখন অনেক সময় স্তনবৃন্তটা মুখে সম্পূর্ণ দিতে পারে না। একটু ফাঁকা থাকেআর এতেই বাতাস ঢুকে পেটে গ্যাস তৈরি করে। আবার যেসকল শিশু ফিডারে দুধ পান করে, দুধ পান করার সময় কিছু বাতাস শিশুর পেটে প্রবেশ করে। এইসকল কারণে শিশুর পেটে গ্যাস হয়ে থাকে।
ফলে শিশুরা শুধু কান্নাকাটি করে।

ছয় মাস বয়সের পর থেকে শিশুকে  বুকের দুধের পাশাপাশি একটু বাড়তি খাবার দেওয়া হয়। এটিও শিশুর পেটে গ্যাস তৈরি করতে পারে। শিশুর বাড়তি খাবারের মধ্যে থাকে বিভিন্ন প্রকার ফল বা শাকসবজি দিয়ে খিচুড়ি এবং মাছ-মাংস ও ডিম অনেক সময় খিচুড়িতে শাকের পরিমাণ বেশি হলে গ্যাস হওয়ার ঝুঁকি থাকে আবার ডালেও গ্যাস তৈরি করে। হঠাৎ করে শক্ত খাবার খাওয়া শুরু করার কারণে শিশুর হজমে সমস্যা দেখা দেয়।

বাচ্চার বদহজম হলে মায়েরা কী করবেন.?

বাবা মায়েরা বুঝতে পারেন না শিশুর বদহজম বা গ্যাসের সমস্যা দেখা দিলে কী করবেন? শিশুকে নিয়ে ছুটেন ডাক্তার বাড়ি? কিংবা খাইয়ে দেন কোন ওষুধ। ওষুধ খাওয়ানোর আগে ঘরোয়া উপায়ে শিশুর বদহজম কমানোর চেষ্টা করুন। ঘরোয়া এই উপায়গুলো বেশ কার্যকর।    

১। গ্যাস বের করুন


নবজাতক শিশুর পেটের গ্যাস কমানোর জন্য খাওয়ার পর পর পেট থেকে বাতাস বের করে দিতে হবে। দুধ খাওয়ানোর সময় লক্ষ্য রাখবেন, ফিডারে নিপল অথবা স্তনবৃন্ত যেন শিশুর মুখে সম্পূর্ণভাবে প্রবেশ করে। মুখের ভিতর যেন বাতাস ঢুকতে না পারে। দুধ খাওয়ানোর পর মায়ের ঘাড়ের বাঁ পাশে বা ডান পাশে নিয়ে শিশুর পিঠের ওপর থেকে নিচের দিকে হাত বুলিয়ে দিতে হবে। এতে পেটের গ্যাস বের হয়ে যাবে।

২। ব্যায়াম করান


ব্যায়াম শব্দটি শুনে ঘাবড়ে গেলেন? ভাবছেন এত ছোট শিশুকে কীভাবে ব্যায়াম করাবেন? শিশুর পা দুটি সাইকেল চালানোর মত আগা পিছনে করুন। এটি শিশুর পেটে চাপ সৃষ্টি করবে, যা গ্যাস বের করতে সাহায্য করে। এক ঘন্টা পর পর এটি করুন। এছাড়া শিশুর পেটে হালকা হাতে  ম্যাসাজ করুন। শিশুকে উপর করে পিঠেও আলতো ম্যাসজ করতে পারেন। এটিও শিশুর পেট থেকে গ্যাস বের করে দিবে।   

৩। সরিষা তেল


সরিষা তেলে কয়েক কোয়া রসুন দিয়ে কিছুক্ষণ জ্বাল দিন। চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করুন। কুসুম গরম অবস্থায় তেলটি শিশুর পেটে ম্যাসাজ করুন। সরিষার তেল পেটে রক্ত চলাচল সচল রাখে এবং পেটের গ্যাস ও ব্যথা কমিয়ে দেয়।    

৪। গরম তোয়ালার সেক


১। নবজাতকের বদহজম বা গ্যাসের সমস্যা দূর করার উপায়.?
একটি তোয়েলা কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে নিন। তোয়ালে থেকে ভাল করে পানি বের করুন। এবার এটি শিশুর পেটে উপরে রাখুন। এটি শিশুর বদহজমজনিত ব্যথা দূর করে দেয়। তবে অব্যশই লক্ষ্য রাখবেন তোয়ালা যেন বেশি গরম না হয়।

২। এইবার জেনে নিন বড় বাচ্চাদের বদহজম দূর করার ঘরোয়া উপায়.?

১। আদা, লেবু এবং মধুর মিশ্রণ


দুই টেবিল চামচ লেবুর রস, আদা বা আদার রস এবং মধু এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে নিন। এটি শিশুকে পান করতে দিন। আদা বদহজমের সমস্যা দূর করে দেয়।

২। প্রচুর পানি পান


খাবার হজমের সমস্যা কারণে পেটে গ্যাস জমা হয়। পানি খাবার হজম করতে সাহায্য করে। তাই শক্ত খাবার খাওয়ার পর শিশুকে অব্যশই প্রচুর পরিমাণ পানি পান করার অভ্যাস করুন।

৩। মৌরির পানি


এক মুঠো মৌরি পানিতে সিদ্ধ করে নিন। এই পানিটি শিশুকে বার বার খাওয়াতে থাকুন। এটি ৬ মাস এবং এর উপরের বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

৪। আদা


বদহজম বা পেটের গ্যাস দূর করতে আদা বেশ কার্যকর। শিশুর খাবারে আদা যোগ করুন। সরাসরি শিশুকে আদা খেতে দিবেন না। ৮ মাস বা তার উপরের বাচ্চাদের খাবারে সাথে আদা দিতে পারেন।

৫। জিরা


এক গ্লাস পানিতে আধা চা চামচ জিরা দিয়ে জ্বাল দিন। এটি শিশুকে কিছুক্ষণ পর পর পান করতে দিন। জিরাতে থাকা ভাল এনজাইম শিশুর বদহজমের সমস্যা দূর করে দেয়। ছয় মাস বা তার উপরে বয়সের শিশুকে এটি দিন।

৬। এলাচ


শিশুর খাবারে এলাচ গুঁড়ো মিশিয়ে দিন। এলাচে রয়েছে পটাসিয়াম,ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন সি যা পেট থেকে গ্যাস বের করে দেয়।

৭। হিং


কুসুম গরম পানিতে এক চিমটি হিং মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি শিশুর পেটের চারপাশে ম্যাসাজ করুন। এটি গ্যাস বের করে দিবে। এক বছর বয়সের বড় বাচ্চার খাবার সাথে এক চিমটি হিং মেশাতে পারেন।

৮। ঘুমাতে যাওয়ার আগে খাবার খাওয়া নয়.!

ঘুমাতে যাওয়ার আগে অনেক বেশি খাওয়া হজমের সমস্যা সৃষ্টি করে। এটি শুধু হজমের সমস্যা করে তা নয়, অনেক সময় পেট ব্যথার কারণ হিসেবে দেখা দেয়।বিশেষজ্ঞরা তাই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পেট ভরে খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন

প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে ঔষুধ সেবন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে রেজিষ্টার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

No comments

Theme images by Petrovich9. Powered by Blogger.