Filariasis and First Aid ফাইলেরিয়া ও প্রাথমিক চিকিৎসা Presented By Super Tv Bd

ফাইলেরিয়া ?



ফাইলেরিয়া ও প্রাথমিক চিকিৎসা
ফাইল্যারিয়াসিস একধরনের পরজীবী সংক্রমণ যা মশাবাহিত হয়ে মানুষের শরীরে ঢুকে লিমফ্যাটিক তন্ত্র এবং ত্বকের নিচে টিস্যুর ক্ষতি করে। এর পিছনে আছে উচেরেরিয়া ব্যকরফ্টিবর্জিয়া মালায়ি এবং বর্জিয়া টিমোরি নামের পরজীবী।উচেরেরিয়া ব্যানক্রফটি নামক জীবানু এই রোগের জন্য দায়ী। মূলত কিউলেক্স মশার কামড়ে এই জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করে তবে অ্যানোফেলিস ও এডিস মশার কামড়ে ও এই পরজীবীর জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। প্রথম দু’টি পরজীবীর কারণে যে ধরনের রোগ হয় তা বাংলাদেশে একটি অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা। পুরুষ এবং নারী, উভয়েই এবং যে কোনও বয়সের মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এই জীবাণূ বহন করে মশা।
যে কোনও গ্রীষ্মপ্রধান দেশে, বিশেষত আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া, ভারত, দক্ষিণ আমেরিকা এবং চিনে প্রায়ই ফাইল্যারিয়াসিসের আক্রমণ দেখা যায়। যদিও জনসংখ্যার বিপুল অংশকে ওষুধ এবং চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসার ফলে আক্রান্তদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, তবু কিছু এলাকায় সংক্রমণের হার এখনও খুব বেশি। বহু মানুষের মধ্যে সারা জীবন কোনও উপসর্গ দেখা যায় না, যেখানে অন্যদের চূড়ান্ত অবস্থায় জ্বর হয়, শরীরে যন্ত্রণা হয় এবং লিম্ফ নোড এবং যৌনাঙ্গ ব্যাথার সঙ্গে সঙ্গে ফুলে যায়। যাঁদের দীর্ঘস্থায়ী উপসর্গ থাকে তাঁদের শরীরের নিম্নাঙ্গে ইডিমার দরুণ অনেক বেশি ফুলে যায়, লিম্ফ্যাটিক চ্যানেল (লিম্ফ জালিকা) বাধাপ্রাপ্ত হলে এই অবস্থা হয়, যাকে এলিফ্যানটিয়াসিস বলা হয়। স্লাইডের ওপর রক্ত পরীক্ষা করে পরজীবী প্রতিরোধী চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়।

লক্ষনঃ-

উপসর্গহীন
অধিকাংশ ক্ষেত্রে, আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে কোনরকম উপসর্গ দেখা যায় না। যাঁদের রক্তে পরজীবীর সংখ্যাধিক্য হয় তাঁদের প্লীহা নষ্ট হয়ে গেলে প্রদাহ উদ্রেককারী টিস্যুর উপস্থিতি দেখা যায়। কোনও কোনও ব্যক্তির প্রস্রাবের রং ঘোলাটে দেখায়।
চূড়ান্ত অবস্থা
সংক্রমণের অব্যবহিত পরেই পরজীবীদের প্রতি শরীরের অনাতিক্রম্য (ইমিউন) প্রতিক্রিয়ার কারণে ফাইল্যারিয়াসিসের চূড়ান্ত অবস্থা দেখা দেয়। সংক্রমণের কামড় এতটাই তীব্র থাকে যে আক্রান্ত ব্যক্তি অক্ষমতার দরুন নিজের কাজেও যেতে পারেন না। চূড়ান্ত অবস্থায়, আক্রান্ত ব্যক্তি নিম্নলিখিত বিষয়ে অভিযোগ জানাতে পারেন: 
➤অনিয়মিত জ্বর ।
কাঁপুনি।.
শরীরে ব্যাথা।
যন্ত্রণাদায়ক এবং ফুলে যাওয়া লিম্ফ নোড।
অতিরিক্ত ফ্লুউড সংগৃহীত হয়ে যাওয়া, যাকে ইডিমা বলা হয়, যেগুলি লিম্ফ্যাটিক নালিকা বাধা প্রাপ্ত হয়ে যাওয়ার ফলে বিভিন্ন অঙ্গ এবং যৌনাঙ্গে দেখা যায়, এবং উপসর্গ কমে গেলে যার উপশম হতে শুরু করে।
যৌনাঙ্গ, শুক্রাশয়, বীর্য নালিকা, এবং অণ্ডকোষে প্রদাহ।
কুঁচকি বা অণ্ডকোষে যন্ত্রণা।
ত্বকের ছাল উঠে যাওয়া।
অঙ্গ ফুলে যাওয়া।
দীর্ঘস্থায়ী লিম্ফেডেমা।
নিয়মিত লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া।
অণ্ডকোষে ফ্লুইড বা তরল জমে যাওয়া যাকে বলা হয় হাইড্রোসিল।
প্রস্রাবের সঙ্গে লিম্ফ্যাটিক ফ্লুইড মিশলে ঘোলাটে বর্ণ লাগে।
নারী এবং পুরুষের যৌনাঙ্গে ইডিমা।
স্তন, বাহু এবং পায়ে ইডিমা যা এলিফ্যানটিয়াসিস বলে পরিচিত।
ইডিমার কারণে ত্বক খসখসে এবং মোটা হয়ে যায়।
⧬⧬ফাইল্যারিয়াসিসের অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে থাকে:- ট্রপিক্যাল পালমোনারি ইয়োসিনোফিলিয়া এটি একটি গুপ্ত ধরনের ফাইলেরিয়া সংক্রমণ। এই উপসর্গগুলি দেখা যায় সংক্রমণের প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া থেকে। উপসর্গগুলির মধ্যে আছে I
রাত্রে শুকনো কাশি
শনশন শব্দে শ্বাস-প্রশ্বাস
শ্বাসকষ্ট
যকৃত বেড়ে যাওয়া (হেপাটোমেগালি)
লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া
দুর্বলতা এবং ওজন কমা
বুকের এক্স-রে করে অস্বাভাবিকতা পাওয়া

⧬⧬ অঞ্চোসারকোসিস ( একে কুঁচকি ঝুলে যাওয়া বা লেপার্ড স্কিন বলা হয়।)
খোশ-পাঁচড়ার মত ত্বকে মামড়ি ওঠা।
শক্ত হাড়ের মত উঁচু হয়ে থাকা ত্বকের নডুইল।
মাঝে মাঝে, মৃগীরোগের সঙ্গে সম্পর্কিত।
⧬⧬ লোইয়াসিস
এল লোয়া নামে পরজীবীর প্রতি অতি স্পর্শকাতরতার জন্য উপসর্গ দেখা যায়,নাইজিরিয়ায় দেখা যায়। তার মধ্যে আছে:ব্যাথা 
চুলকানি
ছুলি (আর্টিক্যারিয়া) বা আমবাত (হাইভ)
সন্ধিস্থলে ফুলে যাওয়া।
স্নায়ুর সঙ্গে যোগ।

⧬⧬পরীক্ষাঃ
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সরাসরি অথবা লিম্ফ নোড কালচার করে এর জীবানু নিশ্চিত করা যায়।
⧬⧬ চিকিৎসাঃ-
ফাইল্যারিয়াসিসের চূড়ান্ত উপসর্গের চিকিৎসা বেশিরভাগ সময়েই করা হয় অ্যান্টি-হিস্টামাইন, এবং যন্ত্রণা নিরোধক ওষুধের সাহায্যে। তবে এই ওষুধের সাহায্যে শুধুমাত্র উপসর্গ দূর করা যায়, রক্তে পরজীবীদের সংক্রমণ থেকে বাঁচার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে পরজীবী নিবারক বা অ্যান্টি পারাসাইটিক ওষুধ প্রয়োগ করা। এই ওষুধ পরজীবীগুলি যখন লার্ভা অবস্থায় থাকে তখনই তাদের মেরে ফেলতে সাহায্য করে এবং প্রাপ্তবয়স্ক পরজীবীদের বাড়তে দেয় না, এমনকি তাদের মেরে ফেলে। তবে যদিও এই ওষুধগুলি কার্যকরী, তাদের কিছু পার্শ্ব বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া আছে, যা প্রদাহ নিরোধক বা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ওষুধের সাহায্যে প্রশমিত করা যায়। এই সব ওষুধ গ্রহণের সময় সতর্কতা প্রয়োজন কারণ লিম্ফ নোডে বা রক্তনালীতে একগুচ্ছ মৃত কীট জমা হলে শরীরে অ্যালার্জি দেখা যেতে পারে বা শরীরে ফোড়া হতে পারে।
⧬⧬ অস্ত্রোপচার
জটিলতার সৃষ্টি হয়ে যে সব রোগীর অণ্ডকোষে অস্বাভাবিক ফ্লুইড বা তরল জমে যায়, লিম্ফ নোডে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম জমে শক্ত হয়ে যায়, বা লার্ভা অবস্থায় কীট রয়ে যায়, তাঁদের জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
⧬⧬ জীবনশৈলী ব্যবস্থাপনা
সংক্রমণের সময় ওষুধ প্রয়োগের সঙ্গে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি করা প্রয়োজন:
হাত এবং পায়ের পাতা পরিষ্কার রাখা।
তারপর শুকনো করে মুছে, নরম রাখার ক্রিম লাগানো।
নখ কাটা এবং পরিষ্কার রাখা।
আঘাত এবং সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা।
কোনও ক্ষত হয়েছে কিনা তা প্রতিদিন লক্ষ রাখা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসার জন্য অ্যান্টি ফাঙ্গাল ক্রিম ব্যবহার করা।
দৈনিক শরীরের প্রতিটি অঙ্গ পরিষ্কার রাখুন যাতে ফাঙ্গাস বা ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণ না হয়।
পা উঁচু করে রাখুন অথবা প্রতিদিন হাঁটুন যাতে না ফুলতে পারে।
প্রচুর বিশ্রাম নিন।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডাইইথাইল কার্বামাজেপিন নামক ঔষুধ সেবন করতে হয়। ২ বছরের কম শিশুদের ও গর্ভবতী মহিলাদের এই ঔষধ সেবন করা যাবে না।
⧬⧬ প্রতিরোধঃ
মশা নিধন করতে হবে, ঘুমানোর সময় মশারী ব্যবহার করা উচিত।

No comments

Theme images by Petrovich9. Powered by Blogger.