উচ্চ রক্তচাপ ও প্রাথমিক চিকিৎসা Presented By SUPER TV BD

 উচ্চ রক্তচাপ


Md.Sumon Ahmed
উচ্চ রক্তচাপ ও প্রাথমিক চিকিৎসা
উচ্চ রক্তচাপ সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের জন্য  কিছু পরামর্শ।

➤➤কখন বুঝতে হবে রক্তচাপ বেশি আছে:-
প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কয়েক দিনের ব্যবধানে একাধিকবার রক্তচাপ মাপা উচিত৷ যদি সিস্টোলিক (ওপরেরটা) রক্তচাপ ১৪০ বা তার বেশি এবং ডায়াস্টোলিক (নিচেরটা) রক্তচাপ ৯০ বা তার বেশি পাওয়া যায়, তাহলে সেই ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপ আছে বলে ধরা হয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের তেমন কোনো লক্ষণ থাকে না। যদি উচ্চ রক্তচাপের কারণে কোনো জটিলতা সৃষ্টি হয়, যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি বৈকল্য; তাহলে এসবের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের বুক ধড়ফড় করা, মাথা ঘোরানো, মাথাব্যথা বা বমি ভাব হতে পারে, স্বাভাবিক রক্তচাপ হলো সেই বল, যার সাহায্যে রক্ত শরীরের একস্থান থেকে অন্যস্থানে পৌঁছায়। হৃৎপিণ্ডের পাম্পিং ক্রিয়ার মাধ্যমে রক্তচাপ তৈরি হয়। রক্তচাপের কোনো একক নির্দিষ্ট মাত্রা নেই। বিভিন্ন বয়সের মানুষের শরীরে রক্তচাপের মাত্রা ভিন্ন এবং একই মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে স্বাভাবিক এই রক্তচাপও বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা, অধিক পরিশ্রম ও ব্যায়ামের ফলে রক্তচাপ বাড়তে পারে। ঘুমের সময় এবং বিশ্রাম নিলে রক্তচাপ কমে যায়। রক্তচাপের এই পরিবর্তন স্বাভাবিক নিয়মের মধ্যে পড়ে। অধিকাংশ সময় রক্তচাপের মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রার ভেতরেই থাকে। সাধারণত বয়স যত কম, রক্তচাপও তত কম হয়। যদি কারও রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি হয় এবং অধিকাংশ সময় এমনকি বিশ্রামকালীনও বেশি থাকে, তবে ধরে নিতে হবে তিনি উচ্চ রক্তচাপের রোগী।

➤➤উচ্চ রক্তচাপের কারণ:-

৯৫ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ থাকে না। বাকি পাঁচ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে ভিন্ন কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে কিডনির অসুখ, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির অসুখ, যেমন থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ৷ কিছু জন্মগত রোগের কারণে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে এবং কখনো কখনো গর্ভকালীন অবস্থায় রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।

➤➤উচ্চ রক্তচাপ কি আসলেই জটিল ব্যাধি :-

উচ্চ রক্তচাপ ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপের কোনো প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যায় না। এটাই উচ্চ রক্তচাপের সবচেয়ে ভীতিকর দিক। যদিও অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপের রোগীর বেলায় কোনো লক্ষণ থাকে না, তবু নীরবে উচ্চ রক্তচাপ শরীরের বিভিন্ন অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এজন্যই উচ্চ রক্তচাপকে ‘নীরব ঘাতক’ বলা যেতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত এবং চিকিত্সাবিহীন উচ্চ রক্তচাপ থেকে মারাত্মক শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

➤➤উচ্চ রক্তচাপে জটিলতা :-

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ চারটি অঙ্গে মারাত্মক ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন— হৃৎপিণ্ড, কিডনি, মস্তিষ্ক ও চোখ। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থেকে হৃদযন্ত্রের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। দুর্বল হৃদযন্ত্র রক্ত পাম্প করতে পারে না এবং এ অবস্থাকে বলা হয় হার্ট ফেইলিওর। রক্তনালির গাত্র সংকুচিত হয়ে হার্ট অ্যাটাক বা ইনফার্কশন হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে; মস্তিষ্কে স্ট্রোক হতে পারে যা থেকে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। এছাড়া চোখের রেটিনায় রক্তক্ষরণ হয়ে অন্ধত্ব বরণ করতে হতে পারে।

➤➤কারা আছেন ঝুঁকিতে:-
স্থূলকায় ব্যক্তি, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি, ধূমপায়ী এবং যাঁরা শারীরিক পরিশ্রম কম করেন, তাঁদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি।

যেসব কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয় :

নব্বই ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না। একে প্রাইমারি বা এসেন্সিয়াল রক্তচাপ বলে। সাধারণত বয়স্ক মানুষের উচ্চ রক্তচাপ বেশি হয়ে থাকে। কিছু কিছু বিষয় উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা বাড়ায়, যা নিম্নরূপ :

➤বংশানুক্রমিক:-
উচ্চ রক্তচাপের বংশগত ধারাবাহিকতা আছে, যদি বাবা-মায়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকে তাহলে সন্তানেরও উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমনকি নিকটাত্মীয়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকলেও অন্যদের রক্তচাপের ঝুঁকি থাকে।

➤ধূমপান :-
ধূমপায়ীদের শরীরে তামাকের নানা ধরনের বিষাক্ত পদার্থের প্রতিক্রিয়ায় উচ্চ রক্তচাপসহ ধমনি, শিরার নানা ধরনের রোগ ও হৃদরোগ দেখা দিতে পারে।

➤অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ :-
খাবার লবণে সোডিয়াম থাকে, যা রক্তের জলীয় অংশ বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তের আয়তন বেড়ে যায় এবং রক্তচাপও বেড়ে যায়।

➤অধিক ওজন এবং অলস জীবনযাপন :-
যথেষ্ট পরিমাণে ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম না করলে শরীরে ওজন বেড়ে যেতে পারে। এতে হৃদযন্ত্রকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় এবং এর ফলে অধিক ওজনসম্পন্ন লোকদের উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে।

➤অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস :-
অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার, যেমন— মাংস, মাখন এবং ডুবন্ত তেলে ভাজা খাবার খেলে ওজন বাড়বে। ডিমের হলুদ অংশ এবং কলিজা, গুর্দা, মগজ—এসব খেলে রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল হলে রক্তনালির দেয়াল মোটা ও শক্ত হয়ে যায়। ফলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।

➤অতিরিক্ত মদ্যপান :-
যারা নিয়মিত অত্যধিক মদ্যপান করেন, তাদের উচ্চ রক্তচাপ বেশি হয়। অ্যালকোহলে অতিরিক্ত ক্যালরি থাকে। এতে ওজন যেমন বেড়ে যায়, তেমনি রক্তচাপও বেড়ে যায়।

➤ডায়াবেটিস :-
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিস রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। এছাড়া তাদের অন্ধত্ব ও কিডনির নানা ধরনের রোগ হতে পারে।

➤অতিরিক্ত উৎকণ্ঠা :-
অতিরিক্ত রাগ, উত্তেজনা, ভীতি এবং মানসিক চাপের কারণেও রক্তচাপ সাময়িকভাবে বেড়ে যেতে পারে। যদি এই মানসিক চাপ অব্যাহত থাকে এবং রোগী ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারেন, তাহলে এই উচ্চ রক্তচাপ স্থায়ী রূপ নিতে পারে ।

কিছু কিছু রোগের কারণে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া গেলে একে বলা হয় সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন। এই কারণগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো— কিডনির রোগ, অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি ও পিটুইটারি গ্রন্থির টিউমার, ধমনির বংশগত রোগ, গর্ভধারণ অবস্থায় অ্যাকলাম্পসিয়া ও প্রি-অ্যাকলাম্পসিয়া হলে, অনেকদিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ির ব্যবহার করলে, স্টেরয়েড জাতীয় হরমোন গ্রহণ ও ব্যথা নিরামক কিছু কিছু ওষুধ খেলে।

➤➤প্রতিকার ও প্রতিরোধ:-
উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনযাপনের ধরনে আনতে হবে কিছু পরিবর্তন। ওজন বেশি থাকলে তা কমাতে হবে, খাবারের সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ অর্থাৎ পাতে লবণ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা বাদ দিতে হবে। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে, দিনে অন্তত ৩০ মিনিট জোরে হাঁটা উচিত এবং এভাবে হাঁটা উচিত সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন।
ধূমপান করা যাবে না। মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা থাকলে তা কমাতে হবে। এ অভ্যাসগুলো যাঁরা এখনো উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হননি, তাঁদেরও থাকা উচিত। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তি জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা সত্ত্বেও তাঁর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না এলে তাঁকে ওষুধ সেবন করতে হবে এবং তা অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো।
ওষুধগুলো প্রতিদিনই একটি নির্দিষ্ট সময়ে সেবন করতে হবে। ওষুধ সেবন করতে যেন ভুলে না যান, সে জন্য এমন জায়গায় রাখতে পারেন, যেন তা সহজেই চোখে পড়ে; যেমন খাবারের টেবিলের একদিকে রাখতে পারেন। হঠাৎ কোনো দিন যদি ভুলেই যান, তাহলে যখনই সেটির কথা মনে পড়বে; তখনই খেয়ে ফেলুন। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তির যদি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে তিনি প্রতি ছয় মাস অন্তর রক্তচাপ পরিমাপ করাবেন। আর যদি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তাহলে এক থেকে দেড় মাস অন্তর বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তচাপ পরিমাপ করাতে হবে।
আর যাঁরা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত নন, তাঁদেরও রক্তচাপ পরিমাপ করাতে হবে নিয়মিত। ১৮ বছর বা এর বেশি বয়সী প্রত্যেকেরই উচিত প্রতি এক থেকে দুই বছর পর পর রক্তচাপ পরিমাপ করা৷ চিকিৎসক ছাড়া অন্য কারও কাছে রক্তচাপ পরিমাপ না করানোই ভালো।


➤➤উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে :-
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। বংশগতভাবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা কমানো সম্ভব নয়। তবে এ ধরনের ক্ষেত্রে যেসব উপাদান নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেগুলোর ব্যাপারে বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত।

১.অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে :-
খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। একবার লক্ষ্য অনুযায়ী ওজনে পৌঁছালে সীমিত আহার করা উচিত এবং ব্যায়াম অব্যাহত রাখতে হবে। ওষুধ খেয়ে ওজন কমানো বিপজ্জনক। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওজন কমানোর ওষুধ না খাওয়াই ভালো।

২.খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা :-
কম চর্বি ও কম কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন খাসি বা গরুর গোশত, কলিজা, মগজ, গিলা, গুর্দা, ডিম কম খেতে হবে। কম তেলে রান্না করা খাবার এবং ননী তোলা দুধ, অসম্পৃক্ত চর্বি যেমন সয়াবিন, ক্যানোলা, ভুট্টার তেল অথবা সূর্যমুখীর তেল খাওয়া যাবে। বেশি আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করা ভালো। আটার রুটি এবং সুজি জাতীয় খাবার পরিমাণমত খাওয়া ভালো।

৩.লবণ নিয়ন্ত্রণ :-
তরকারিতে প্রয়োজনীয় লবণের বাইরে অতিরিক্ত লবণ পরিহার করতে হবে।

৪.মদ্যপান :-
অতিরিক্ত মদ্যপান পরিহার করতে হবে।

৫.নিয়মিত ব্যায়াম :-
সকাল-সন্ধ্যা হাঁটাচলা, সম্ভব হলে দৌড়ানো, হালকা ব্যায়াম, লিফটে না চড়ে সিঁড়ি ব্যবহার ইত্যাদি।

৭.ধূমপান বর্জন :-
ধূমপান অবশ্যই বর্জনীয়। ধূমপায়ীর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকুন। তামাক পাতা, জর্দা, গুল লাগানো ইত্যাদিও পরিহার করতে হবে।

৮.ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ :-
যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের অবশ্যই তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

৯.মানসিক ও শারীরিক চাপ সামলাতে হবে :-
নিয়মিত বিশ্রাম, সময়মত ঘুমানো, শরীরকে অতিরিক্ত ক্লান্তি থেকে বিশ্রাম দিতে হবে। নিজের শখের কাজ করা, নিজ ধর্মের চর্চা করা ইত্যাদির মাধ্যমে মানসিক শান্তি বেশি হবে।

১০.রক্তচাপ নিয়মিত পরীক্ষা :-
নিয়মিত চিকিত্সকের কাছে গিয়ে রক্তচাপ পরীক্ষা করানো উচিত। যত আগে উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে, তত আগে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং জটিল রোগ বা প্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

➤➤উচ্চ রক্তচাপ হলে চিকিত্সা কি জরুরি :-?
উচ্চ রক্তচাপ সারে না, একে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এজন্য নিয়মিত ওষুধপত্র সেবন করতে হবে। অনেক রোগী কিছুদিন ওষুধ খাওয়ার পর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এলে ওষুধ বন্ধ করে দেন, মনে করেন রক্তচাপ ভালো হয়ে গেছে, কাজেই ওষুধ খাওয়ার দরকার কী? এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কোনোক্রমেই ডাক্তারের নির্দেশ ছাড়া ওষুধ সেবন বন্ধ করা যাবে না। অনেকেই আবার উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত জানার পরেও ওষুধ খেতে অনীহা প্রকাশ করেন বা খেতে চান না। কারও কারও ধারণা, একবার ঔষুধ খেলে তা আর বন্ধ করা যাবে না।

➤➤ঔষধ ছাড়াই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন ৫টি উপায়ে:-
ইদানিং অনেক মানুষকেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। কিছুদিন আগেও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা শুধুমাত্র বয়স্কদের রোগ হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু বর্তমানে অনেক কম বয়সী মানুষও এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। গবেষণায় পাওয়া যায় উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ১০ জন ব্যাক্তির মধ্যে ৭ জনেরই স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক ঝুঁকি বেশি থাকে।

ক্রমাগত বসে কাজ করা, ব্যায়ামের অভাব, অতিরিক্ত চিন্তা করা এবং লবণাক্ত খাবার খাওয়া উচ্চ রক্তচাপের কারণ হিসেবে ধরা হয়। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে না রাখলে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। চিন্তা করবেন না। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার অনেক সহজ কিছু উপায় আছে। এই উপায়গুলি আপনাকে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।

➤➤সপ্তাহে অন্তত ১ দিন জগিং করুন :-
কোপেনহেগেন সিটি হার্ট কার্ডিওভেস্ক্যুলার প্রায় ২০,০০০ নারী পুরুষের ওপর একটি গবেষণা করে দেখতে পান যে, সপ্তাহে অন্তত ১ দিন ১ ঘণ্টা জগিং ৬ বছর পর্যন্ত আয়ু বাড়ায়। তারা বলেন, জগিং-এর সময় অক্সিজেন গ্রহনের পরিমাণ বাড়ে যা উচ্চ রক্তচাপ কমায়। আর অক্সিজেন শরীরের রক্তের সাথে মিশে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এতে হৃদপিণ্ড সহজেই রক্ত পাম্প করে পুরো দেহকে সতেজ রাখে। সুতরাং রক্তচাপ কমাতে জগিং করুন। যারা জগিং করতে পারেন না তারা দ্রুত হাঁটার অভ্যাস করুন। ডাক্তারদের মতে দ্রুত হাঁটা অনেকাংশে জগিং এর মতই কার্যকরী।

➤প্রতিদিনের খাবার তালিকায় দই রাখুন:-
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপস্থাপিত একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতিদিন এক কাপ পরিমাণ চিনি ছাড়া বা অল্প চিনি যুক্ত দই উচ্চ রক্তচাপ প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে দেয়। দইয়ের ক্যালসিয়াম ধমনীকে নমনীয় ও প্রসারিত করে। এতে করে রক্ত কোন প্রকার বাঁধা ও চাপ ছাড়াই পুরো দেহে সঞ্চালিত হতে পারে। এতে করে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কমে যায়।

➤সপ্তাহে ৫ টি কলা খান:-
সপ্তাহে ৫টি কলা উচ্চ রক্তচাপের কারণে মৃত্যু ঝুঁকি কমায়। কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা দেহের লবনের পরিমাণ ঠিক রাখে। এতে করে রক্তচাপ কমে। অনলাইনে প্রকাশিত ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের একটি নতুন গবেষণা অনুযায়ী কলার পটাসিয়াম শরীরে তরল পদার্থের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে এবং উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

➤লবন খাবেন না:-
লবন আপনার ধমনীতে বিদ্যমান তরলের সাথে মিশে গিয়ে তরলের আয়তন বৃদ্ধি করে। এতে করে রক্ত সঞ্চালিত হওয়ার সময় ধমনীতে চাপ পরে। ফলশ্রুতিতে রক্ত চাপ বাড়ে। যতটা সম্ভব লবন খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।

➤ধূমপান করবেন না:-
ধূমপান উচ্চ রক্তচাপের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সিগারেটের নিকোটিন দেহে প্রবেশ করে রক্তে মিশে গিয়ে অ্যাড্রেনালাইন (বিক্করস) উৎপন্ন করে। এই রসটি হার্ট বিটকে দ্রুততর করে ফেলে। যার ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। এছাড়াও নিকোটিন রক্তে মিশে ধমনীকে আড়ষ্ট করে। যার ফলে রক্ত সঞ্চালনে বাঁধা পাওয়া যায় ও ধমনীতে চাপ পরে রক্তচাপ বেড়ে যায়। সুতরাং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে চাইলে ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করুন।

No comments

Theme images by Petrovich9. Powered by Blogger.